Howray hahakar

হাওড়ায় হাহাকার

প্রাক কথন
সে এক সময় ছিল, যখন পূর্বা আর আমি প্রায়শঃই দুর্গাপুর যেতাম। মাসে এক বার করে তো বটেই। দুর্গাপুর এর sihm এর কিছু কাজের সূত্রে। এই গল্পটা হল সেই এক যাওয়ার গল্প
 প্রথমেই বলে রাখা ভালো, যে প্রথমবার আমরা বাস এ গেছিলাম, এবং বাস এ ধরুন সারাটা সময় বাবুল সুপ্রিয়র রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজছে! উনি শ্রদ্ধেয়, কিন্তু সবসময় তো সব বিষয়টা নেওয়া যায় না। তা যা হোক, তার পর শুরু হল সিংহম। দুর্গাপুর পৌঁছে গেছি, পূর্বা কে বললাম , “ আর একটু বাকি ছিল রে! শেষে রণবীর খুন করবে, ইস দেখতে পেলি না।“ তাতে পূর্বা বলল, " যাহ  আর একটু পরে নামব? শেষ টা দেখি, এ কী রে'! 
যাক সেসব অন্য গল্প, আজ আমাদের প্রথম ট্রেন এ করে দুর্গাপুর যাওয়া এবং আসার গল্প থাক। এটুকু বলে রাখি, ওদিন সন্ধ্যেবেলা আমাদের নেমন্তন্ন ছিল এবং বলাই বাহুল্য, সেটায় আমরা যেতে পারিনি
প্রথম অধ্যায়
সকাল ৬ নাগাদ পূর্বা আর আমার ট্রেন চেপে যাওয়ার কথা ছিল একটা জায়গায়।
খবর পেলাম আমাদের ট্রেন আসে ২৩ নম্বর প্লাটফর্মে। টিকিটে লেখা কোচ নম্বর হলো সি ফাইভ। যথাসময়ে ট্রেন এলো। সি ফাইভ না দেখতে পেয়ে গম্ভীর মুখে আমরা ট্রেনে উঠে জিজ্ঞাসা করলাম এটা কী অমুক ট্রেন আর অমুক জায়গায় যায়?
 এক ভদ্র সন্তান বিচলিত হয়ে বললেন, না না ম্যাডাম; সেটা তো ১২ নম্বর প্লাটফর্মে। এ ট্রেন সে ট্রেন নয়!
  এর পর শুরু হলো এক রোগা আর এক মোটা মাঝবয়সী মহিলার উসেইন বোল্ট হয়ে যাওয়ার একটা রেস আগাইনস্ট টাইম প্রয়াস।
  বাকসো,  প্যাট্রা, বস্তা, ইদুর, মানুষ - সব হার্ডেল পেরিয়ে দৌড়।
  এই দৌড় রামগোপাল বর্মার  দৌড়, যা বক্স অফিসে চলেনি, তাকে ফেল পরিয়ে দেবে।
 পূর্বা কে বললাম, যা মা, আগে যা( রোগা বলে জোরে দৌড়োয় তো, তাই)। কুলী বললো ঠেলা চাপিয়ে পৌঁছে দেব? জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে আবার শুরু হলো দৌড়।
  একজন দেখতে দেখতে বললো, ভাগিয়ে ভাগিয়ে, ট্রেন ছোড় কর চলা গয়া! মনশ্চক্ষে দেখলাম ছুটতে ছুটতে ই যে সে চলে গেলো বলে গেলো না।
  শেষে সেই ইলুসিভ ট্রেন। যে কোনো একটা এ সি চেয়ার কার এর দোরগোড়ায় পূর্বা লাফিয়ে উঠে, শাহরুখ খান আর হালের কলঙ্ক স্টাইল এ হাত বাড়িয়ে একদম, যা সিমরান জী লে আপনি জিন্দেগি স্টাইলে দাঁড়িয়ে। আমি তখনও দৌড়োচ্ছি।  
  উঠতে পেরেছিলাম।
  সাকুল্যে ৯ মিনিটের মধ্যে

দ্বিতীয় অধ্যায়
কেমন করে ট্রেন ধরেছি, তার গল্প তো Sudarshana Ghosh বলেছে, এবার ফেরার ঘটনা বলি-
যেহেতু সকালে ট্রেন প্রায় মিস্ করছিলাম, ফেরার সময় আগেভাগেই স্টেশনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, আর প্ল্যাটফর্ম শুদ্ধু লোককে আকুল ভাবে নানাবিধ প্রশ্ন করছি, “ভাই, এটা কি চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম ?” “এখানেই কি হাওড়ার ট্রেন আসবে?” “সেই ট্রেনটা শতাব্দী তো?”
লোকে নিশ্চই ভাবছিল আমরা সদ্য সুন্দরবন থেকে আসছি, কিন্তু আমরা অকুতোভয়!
হেনকালে রকেট লন্চিং এর প্রিসিশনকেও হার মানিয়ে, কাঁটায় কাঁটায় ঠিক সময়ে, স্বপ্নের মত নীল ট্রেন, unannounced ভাবে,  প্ল্যাটফর্মে ঢুকল। মাত্র দু মিনিট দাঁড়াবে।
কোচ নম্বর মিলিয়ে উঠে পড়ে দেখি আমাদের সিটে দুটো  উটকো লোক বসে আছে !
অসম্ভব কনফিডেন্সের সাথে বললাম , ভাই, এটা   আমাদের  সিট।
ছেলেটা বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল, “আমাদের টিকিট   কিন্তু এক্ষুণি টিটি দেখে গেছে। আপনারা কিছু একটা ভুল করছেন মনে হয়  ।”
তার শীতল আত্মনির্ভরতা দেখে একটু ঘেবড়ে গেলেও না দমে বললাম, “কি মুস্কিল! আমাদের টিকিটটা দেখুন, সিট নম্বর তো লেখাই আছে!”
ছেলেটি টিকিট দেখতে দেখতে জিগ্যেস করল, “আচ্ছা, আপনাদের কোন্ ট্রেন ধরার কথা ?” 
“কেন, শতাব্দী?”
ছেলেটা এবার অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ল-
“কিন্তু এটা তো ব্ল্যাক ডায়মন্ড!?! একটু লেটে চলছে বলে শতাব্দীর টাইমে ঢুকেছে”
অ্যাঁ, এটা শতাব্দী নয়!
রূদ্ধশ্বাসে দৌড়ে গিয়ে ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা এক রেল কর্মচারীকে বললাম, “প্লিজ রুকিয়ে! হাম  ভুল ট্রেনমে চড় গয়ে!” (আমার আবার হিন্দীটা যাকে বলে, স্ট্রং পয়েন্ট নয়)
লোকটা আমার বালকোচিত আবদার শুনে অত্যন্ত বিরক্ত মুখে বলল, “গাড়ি চল রহি হ্যায়, দেখতে নেহী?”
তারপর..আর নাই বা বললাম !
আমাদের এই অপূর্ব অজ্ঞতা এবং অপদার্থতার কথা পরলেন, এর জন্যই ধন্যবাদ।
পূর্বা এবং সুদর্শনা